একজন বাবা বলছি

 

আপনার ছোট সন্তান যখন আপনার কোলে পেশাব করে দেয় তখন কি করেন? নিশ্চয় চিল্লাচিল্লি শুরু করে দেন! কিংবা কোল থেকে/খাট থেকে পেশাব করা অবস্থায়ই নামিয়ে দেন। ফলাফল পেশাবটা আর ঠিকমতো করে না বচ্চাটা! আমি কিন্তু এমনটা কখনোই করি না। বাচ্চাকে কোলে নেয়া অবস্থায় যখন বুঝতে পারি ও পেশাব করছে আমি চুপ থাকি। ছেলেটাকে ভালোমতো পেশাব করতে দেই। খাটের উপর যখন ও পেশাব করতে নেয় তখনো ওকে তড়িঘড়ি করে নামাই না। কাছে থাকলে নিচে হাত পেতে পেশাব ধরে রাখি পানির মতো করে। তারপর ফেলে দেই বাথরুমে।

একবার এক অমুসলিম মসজিদে নববীতে পেশাব করতে বসে। সে দৃশ্য দেখে রাসূল (সা.)-এর সাথে থাকা সাহাবীরা ঐ লোকটিকে তাড়িয়ে দিতে উদ্ধত হয়। রাসূল সা. সাহাবীদেরকে থামিয়ে দিলেন। বললেন, "তাকে পেশাব করতে দাও!" বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা করে দেখেছে যে পেশাব করা অবস্থায় যদি কাউকে থামিয়ে দেয়া হয় তাহলে মূত্রথলিতে ইনফেকশন হবার সম্ভাবনা থাকে। আর সেটা যদি হয় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তাহলে তো আরো বিপদ হতে পারে।

এই গরমে বাচ্চাকে সব সময় ডায়াপার পড়ানো সম্ভব হয়ে উঠে না। বাচ্চার কষ্ট হবে ভেবে আমরা শুধু রাতেই বাচ্চাকে ডায়াপার পড়াই। বাচ্চার পেশাব পায়খানা যদি আমার সাথে থাকা অবস্থায় করে তাহলে আমিই পরিষ্কার করে দেই। অনেক বাবারা আছেন যারা বাচ্চা পায়খানা করলেই বাচ্চার মাকে ডাকা শুরু করে দেন। বাবারা বাচ্চাদের পেশাব পায়খানা পরিষ্কার করতে চান না। এমনটা ঠিক নয়। আমরা বাবা হবার আবেগ অনুভূতি প্রকাশ করি স্যোসাল মিডিয়ায়, কিন্তু এসব ব্যাপারে উদাসীন। আমরা ধরেই নেই যে বাচ্চাকে পরিষ্কার করানো, গোসল করানো, খাওয়ানো এসব কাজ হয়তো মায়েদের! বাচ্চা লালন পালনের এই সব ছোট ছোট ব্যাপার যদি বাবা-মা ভাগ করে করেন তাহলে সন্তান পালন করতে গিয়ে মায়েরা হাপিয়ে উঠবেন না।

বাবারা অনেক সময়ই বাচ্চা কান্না করলে মায়ে কাছে দিয়ে দেন। বলেন, বাচ্চাকে থামাও তো! কেন ভাই, বাচ্চাকি শুধু মায়ের একার নাকি! আপনিও তো পারেন বাচ্চাটাকে শান্ত করতে। আপনি কি পারেন না বাচ্চাকে ঘুম পারিয়ে দিতে! এসব শুধু সদইচ্ছার ব্যাপার। বাচ্চারা অনেক সময় সকালেই ঘুম থেকে উঠে পরে। কিন্তু তখনো তো মায়েদের ঘুম শেষ হয় না। অনেক বাবা আছেন যারা তখনো নাক ডেকে ঘুমান। সারারাত না ঘুমিয়ে থাকা মায়েরই বাধ্য হয়ে সন্তান সামলাতে হয়। ফলাফল মায়েদের খিটখিটে মেজাজ। হতাশা। মা হওয়ার স্বাদ মিটে যায় কারো কারো। মাতৃত্বকে উপভোগ করার পরিবর্তে তখন এসবকে শাস্তি মনে হয়। মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন অনেক মায়েরা। আমরা বাবারা একটু সুদৃষ্টি দিলে, আমরা বাবারা বাবাদের দায়িত্ব পালন করলে এসব মায়েরা বেঁচে যেতে পারেন। আসুন না বাবা-মা উভয়ে মিলে প্যারেন্টিংটা উপভোগ করি।

আমাদের সমাজে মাকেই শুধু উপদেশ দেয়া হয়। বাবারা তো টাকা কামাই করেই সম্রাট শাজাহান সেজে বসে থাকেন। সারাদিন অফিস করে এসে ক্লান্ত হয়ে যান বাবারা। বাসায় এসেই হুকুমের পর হুকুম। পরিবারের অন্য সদস্যরা ভাবেন মায়েরা তো বাসায়ই থাকে শুয়ে বসে। ওরা তো রেস্ট নিতেই পারেন। বাবাতো আর শোয়ার সময় পায় না! এই সব অপদার্থদের কি করে বুঝাবেন, শোয়ে থাকা কতটা কষ্টের। ঘন্টার পর ঘন্টা এক কাতে শুয়ে থাকতে হয় অনেক সময়। সন্তানের ঘুম ভেঙে গেলে তো আবার মাকেই খ্যান খ্যান সহ্য করতে হবে। এই ভেবে আর নড়াচড়া করেন না। এই শোয়কেই বাসার অন্য সদস্যরা ভাবেন মা তো শুয়ে বসেই কাটায়! সবচেয়ে বেশি আফসোস লাগে যখন বাসার নারী সদস্য যারা সন্তান জন্ম দিয়েছে তারাও এসব কথা বলেন।
ওদেরকে কে বুঝাবে বলুন!

সন্তানকে সময় দিতে গিয়ে মাকে ভুলে যাবেন না প্লিজ! নতুন মাকে মাতৃত্বের স্বাদ বুঝার আগে তার মনে মাতৃত্বভীতি তৈরি করে দিবেন না। ফল পেয়ে গাছের কথা ভুলে গেলে চলবে কেমন করে বলুন! মায়েরা কলাগাছ নয় যে একবার ফল দিলেই তারদিকে না তাকালেও সমস্যা নাই! মায়েরা খনির মতো। পৃথিবীর সব মনীষীরা এই খনিরই প্রোডাক্ট। মায়েদের প্রতি একটু সহানুভূতি প্রয়োজন, একটু ভালোবাসা দরকার। মায়েদের যত্ন দিন। মা ভালো থাকলে সন্তানও ভালো থাকবে। নিরাপদ হবে আমাদের আগামী।

ওহে বাবারা মনে রাখবেন, "আমাদের পায়ের নিচে থাকে জুতা আর মাটি। মায়েদের পায়ের নিচে থাকে জান্নাত!"

#একজন_বাবা_বলছি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে