আমার সংসার আমার সুখ



ছানাটা এখনো কথা বলতে পারেনা ঠিক করে। সবে মাত্র মা ডাক দিতে শিখেছে। ওর মায়ের কাছে গিয়েও মা বলে, আবার আমার কাছে এসেও মা বলে। ছড়াগান শুনে নাচের ভঙ্গিতে হাত পা নাড়ে। ওর চোখ মুখ দেখলে বুঝতে পারে কখন কি লাগবে, কখন কি অসুবিধা হলো। ছোটখাটো ব্যাথায় খুব একটা কান্না করে না। দুই ঠোট বাঁকিয়ে ওহ ওহ করে শুধু। ছানাটা চোখের সামনে বেড়ে উঠছে একটু একটু করে। মুচকি হাসি, খিলখিল করে হাসি..... নানান ভঙ্গিমায় সাড়া দেয় সব কিছুতেই। ছানাটাকে ঘিরে স্বপ্নের হাজারো জাল বুনি। মেতে থাকি আনন্দ আর সুখের আবেশে।

কোথাও যাবার জন্য তৈরি হচ্ছি দেখলে ছানাটা আর পিছু ছাড়ানে। দুই হাত উপরে তুলে কোলে উঠার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কোলে না উঠানো পর্যন্ত ছানাটা থামে না। এই সময়টাতে ও আর কারো কাছে যেতে চায় না। ওর মায়ের কাছেও না। আমি যেখানেই যাই ও সাথে যাবেই। ওর চোখ মুখে আবদারের চাহনি। মায়া মায়া দৃষ্টি নিয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। যেন বলতে চায়, "বাবা, আমাকে রেখে যেও না কিন্তু। আমিও তোমার সাথে যাবো"। মুখ দিয়ে শব্দ উচ্চারণ করতে না পারলে কি হবে, ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমি সব পড়ে ফেলি। ছানাটা সব বুঝিয়ে দেয় ওর দৃষ্টি আর হাসি মাখা চাহনি দিয়ে।

একা একা সন্তান দেখাশোনা করা কম কথা নয়। হাড়ভাঙা খাটুনি থেকেও বেশি কষ্টের। ছানাটার মা সারাদিন ছানাটাকে একাই সামলে রাখে। শত দুষ্টুমিতেও ওর প্রতি বিরক্ত হয় না। কখনো বিরক্ত হলেও আমার উপর এসে পড়ে তার প্রভাব। আমি রাগ করিনা সেই বিরক্তি প্রকাশের কথাগুলোতে। আমি বুঝি, ওর স্থানে আমি থাকলেও হয়তো এর থেকে বেশি প্রতিক্রিয়া জানাতাম। মায়েরা একা একা সন্তানদের রাখতে পারে ঠিকই কিন্তু বাবাদের জন্য এইটা অনেক বেশি কঠিন। এর চলা বলা ভালো, প্রায় অসম্ভব।

কাজে বেরুনোর আগ মূহুর্তে এক প্রকার লুকিয়েই বাসা থেকে বের হই। আমাকে বের হতে দেখলে কিছুতেই সামলানো যায় না ওকে। একবার কোলে উঠতে পারলে তো সুপারগ্লোর মতো লেগে থাকে। আমার গলাটাতে শক্ত করে ধরে। ওর মা খুব কষ্টে আমার থেকে ছানাটাকে ছাড়িয়ে নেয়। শরীর থেকে অঙ্গ আলাদা করলে যেমন লাগে সে সময়টাতে আমার তেমনই কষ্ট হয়। আমার ইচ্ছে হয় ২৪/৭ সময়টাই ছানাটার সাথে থাকি। কিন্তু কাজে তো যেতেই হবে! কাজ থেকে ফিরে এলে কখনো কখনো অভিমানের নয়নে তাকায়। বুঝাতে চায় যাবার সময় আমাকে নাওনি। এখন তুমি যাও, তোমার সাথে আড়ি। কিন্তু পরক্ষণেই আবার আমার কাছে আসে মুচকি একটা হাসি দিয়ে। অভিমানের হাজারো কথা তখনো জমা থাকে ছানাটার চোখে-মুখে। সেসব পড়তে পড়তে বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যে নামে। ছেলে আর বাবার খুনসুটি চলে অবিরত।

ছানাটার বয়স ১৫ মাস চলে। গুটি গুটি পায়ে হেঁটে চলে সামনের দিকে। আধো আধো বুলে বুঝিয়ে দেয় চাওয়া পাওয়া। সকলের নিকট দোয়া প্রার্থী ছানাটার জন্য, ছানাটার মায়ের জন্য, যেন সবকিছু দক্ষ হাতে সামলাতে পারে, আমার জন্যও দোয়ার দরখাস্ত আপনাদের কাছে, যেন ভালবাসার ডানা দিয়ে আগলে রাখতে পারি মা পাখি আর ছানাটাকে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে