আমাদের সন্তান আমাদের স্বপ্ন-০১
একটি সন্তান একটি স্বপ্নের মতো। ছোট থেকে আস্তে আস্তে বেড়ে উঠার প্রতিটি
মুহুর্তের সাক্ষী আমি। বীজের অঙ্কুরোদগম থেকে শুরু করে একটি কুঁড়ি আর দুটি
পাতার ছোট্ট চারাগাছ হওয়া, সেখান থেকে ডালপালা গজানো আর মৃদু বাতাসের সাথে
সাড়া দিয়ে হেলে দুলে উঠার মতো করে ছোট ভ্রুণটিও বেড়ে উঠে। মাতৃগর্ভে একটু
একটু করে বেড়ে উঠে স্বপ্নের সন্তান। ছানাটির মা-ই যে নিজের রক্ত মাংস দিয়ে
বড় করছে ছানাটিকে! আর তাইতো ছানাটির অস্তিত্ব সবার আগে ওর মা-ই টের পায়।
বিয়ের
পাঁচ বছর পর করুনাময়ের ইচ্ছায় আমাদের প্রথম সন্তান হয়। ফোন করে সে খবর
আমার কানে দিতে একটুও বিলম্ব করে না আয়েশা। একটু আগেও যেখানে আমাদের পরিচয়
ছিলো শুধু আমাদের নাম, সেখানে আমরা একে অপরকে বাবুর আব্বু-বাবুর আম্মু বলে
পরিচয় দিচ্ছি। অনাগত সন্তানকে ঘিরে আমাদের গল্প এগিয়ে চলে। ছোট ছোট মিষ্টি
মধুর ঝগড়া আর নানান খুনসুটি চলে অনাগত ভবিষ্যতের কল্পনায়। ছেলে হবে নাকি
মেয়ে সে নিয়েও কথা হয় আমাদের মাঝে। ছেলে মেয়ের নাম ঠিক করা, ওর জন্য জুতো
আর জামা কেনা আর জামা-কাপড় রাখার জন্য ছোট্ট একটা আলমারি কেনার তাড়া আসে
আয়েশার থেকে। শীতের জামা কাপড় লাগবে বলে আমি সেই গল্পের মাঝে আরেকটু রসদ
ঢালার চেষ্টা করি। আর আয়েশাকে বলি, তুমি তো বাচ্চাটার একটুও খেয়াল রাখছো
না! শীতের জামা না হলে তো ছানাটার ঠান্ডা লেগে যাবে। ছানাটির জন্য মুজা আর
কান টুপি কেনার তাগাদা দিয়ে বাচ্চার মা আবার আমাকেই বেখায়ালী বাবা বানিয়ে
দেয় পরক্ষণেই। যে কোন ভাবে আমি জীততে দেয় আয়েশাকে। ওর মন ভালো রাখতে পারলেই
তো বাচ্চাটিও হবে ফুরফুরে মেজাজের!
আয়েশার এখন অনেক ব্যস্ততা। আগে
ছিলো শুধু নিজের যত্ন নেয়ার তাড়া। মাঝে মাঝে না খেলেও চলে যেতো দু-এক বেলা।
এখন তো আর আয়েশা একা নয়। ওর ভেতরে বেড়ে উঠছে আরেকটি জীবন। এক প্রাণের ভেতর
আরেক প্রাণ। সৃষ্টিকর্তার কি দারুণ মহিমা তাই না? সেই নতুন প্রাণের কথা
চিন্তা করে হলেও আয়েশা আর খাবার দাবারে অবহেলা করে না। ইউটিউব ঘেঁটে ঘেঁটে
খোঁজ নেয় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হবে, কি খেলে বাচ্চার ব্রেন ডেভেলপ হবে
..... কিভাবে বাচ্চা লালন পালন করতে হয়, আরো যে কত কি! আয়েশার ব্যস্ততার
শেষ নেই এসব নিয়ে । আমি ওর ছেলে মানুষিকে সাঁই দিই। ওর আবেগ অনুভূতিকে
মূল্য দেবার চেষ্টা করি।
আয়েশা নেট ঘেঁটে ঘেঁটে আবিষ্কার করলো
সন্তান গর্ভে আসলে দুধ, ডিম, কলা এসব খেতে হয়। কিন্তু ও যে এইসব একেবারেই
পছন্দ করে না। এখন উপায়? আয়েশা সিদ্ধান্ত নেয় যত অসুবিধাই হোক খাবে এসব।
নাক বন্ধ করে হলেও খাবে। দুধ আর ডিমের উৎকট গন্ধে যে এসবের ধারের কাছেও
আসতো না সেই আয়েশা এখন খুব আগ্রহ নিয়েই খাচ্ছে ওসব। সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে
কথা। কোন কিছুতেই ছাড় দেয়া চলবে না।
সন্তান গর্ভে আসার পর থেকে
ত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বাবা-মায়েরা। প্রয়োজনে নিজের ক্যারিয়ারকেও
ছাড় দেয়। সন্তানের ভালো মন্দকে নিজের করে নেয়। সন্তান বড় হতে থাকে আর
বাবা-মায়েদের ত্যাগও বড় হয়। বাবারাও তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করে সন্তান আর
মায়েদেরকে ভাল রাখতে।
আমাদের গল্পগুলো চলতে থাকে আগত সন্তানকে
ঘিরে। সন্তান বড় হয় মাতৃগর্ভে আর আমাদের স্বপ্নও বেড়ে উঠে সন্তান বেড়ে উঠার
সাথে সাথে। কল্পনায় ছানাটিকে আদর করি, ঘ্রাণ নেই। চোখ বন্ধ করে অনুভব করি
সন্তানের অস্তিত্ব.......।
#আমাদের_সন্তান_আমাদের_স্বপ্ন-০১।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন